দুর্যোগকবলিত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। কিন্তু বাঁধ না হওয়ায় ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে ওই অঞ্চলের জীবন-জীবিকা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর ত্রাণ দিতে গেলে তারা ত্রাণের পরিবর্তে দাবি জানিয়েছে। জনগণের সেই প্ল্যাকার্ড বুকে ঝুলিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তৃতা করেছেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা। বুকে প্লাকার্ড ঝুলিয়ে বক্তৃতার এমন দৃশ্য নিকট অতীতে দেখা যায়নি।
 
আজ বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই দাবি তুলে ধরেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে তিনি বেড়িবাঁধ নিয়ে কথা বলেন। এক পর্যায়ে জনগণের প্লাকার্ডটি স্পিকারকে দেখান এবং জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সেটি বুকে ঝুলিয়ে নেন। অবশ্য তার বক্তৃতা শেষ হওয়ার আগেই সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় মাইক বন্ধ হয়ে যায়।
 
এর আগে সরকার দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দ্বারা আমরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এই ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে। আমার ওখানে অনেকগুলো চর আছে। যার চারপাশে বড় বড় নদী আছে। আগুনমুখা নদীর কথা শুনেছেন। ভয়ানক এই নদীর ওখানে অনেকগুলো চর রয়েছে। এই চরগুলোতে বেশিরভাগ জায়গায় বেড়িবাঁধ নেই। ইয়াস ঝড়ের সময় অতিরিক্ত জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গেছে। চাষাবাদের জমি নষ্ট হয়ে গেছে, তারা যেসব পুকুরে মাছ চাষ করেছিলো, সেগুলো সব জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে।
 
এমপি শাহজাদা বলেন, ঝড়ের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে সেখানকার সবার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। একটি উপজেলায় ৩৪ লক্ষ এবং অপর উপজেলায় ২১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এসব বরাদ্দ নিয়ে সেখানে আমরা গেলে সেখানকার লোকজন স্লোগান দিয়েছে- আর কোন দাবি নাই, ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই। ভুক্তভোগী জনগণ এধরনের প্লাকার্ড নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলো। আমি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন কেউ না। আমি তাদের পক্ষ থেকে আমি এটা পরে দেখাচ্ছি।
 
এই বলে তিনি নিজের গলায় ‘আর কোন দাবি নাই, ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই’- লেখা প্লাকার্ডটি বুকে ঝুলিয়ে বক্তৃতা করতে থাকেন। এ সময় তিনি এলাকায় এই বাঁধের কারণে তাকে রোষানল পড়তে হয়েছিলো বলেও উল্লেখ করেন। শুধু তাই নয়, উপকূলের অনেক সংসদ সদস্যকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বলেও জানান তিনি।
 
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পটুয়াখালীসহ উপকূলের বহু স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়। তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে খুলনা-সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চলছে।